নিজস্ব সংবাদদাতা | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ১০

লাল কো-অর্ড ড্রেস। কাঁধছোঁয়া চুলে লং কার্ল। টমেটো লালচে ঠোঁট। যতটুকু না সাজলে নয় ঠিক ততটুকুই রূপটান। সারা শরীরে ছিমছিম হিরের গয়না। এই সাজে বুধবার রোদ ঝলসানো কলকাতায় পা রেখেছিলেন অদাহ শর্মা, ‘দ্য কেরালা স্টোরি গার্ল’। উপলক্ষ, হিরের গয়নার নামীদামি জুয়েলারি ব্র্যান্ড ‘লাইমলাইট ডায়মন্ড’-এর শোরুম খুলল কাঁকুড়গাছিতে। এই শো রুমে অত্যন্ত কম দামে চোখ ধাঁধানো, আধুনিক ডিজাইনের গয়নার সম্ভার রয়েছে। যা যে কোনও মেয়ের মুখে হাসি ফোটাবে। কম দামের কারণে সন্তুষ্ট থাকবেন পুরুষেরাও। উদ্বোধনের পর তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি মধ্য কলকাতার প্রথম সারির একটি হোটেলে। সেখানেই তাঁর পছন্দের গয়না এবং স্বামীর থেকে কোনও মেয়ের গয়না উপহার পাওয়া নিয়ে কথা উঠতেই অদাহ-র রসিকতা, ‘‘গয়না পরতে কার না ভাল লাগে! আমারও লাগে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ আমায় গয়না উপহার দেয়নি! আমি দিয়েছি কিন্তু। তাছাড়া, আমি বিয়ে করিনি। এ জন্মে হবে কিনা তাও জানি না। ইচ্ছে, আগামী জন্মে বিয়ে করব। তখন নিশ্চয়ই স্বামীর থেকে উপহার পাওয়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেব।’’

যদিও সেদিন নায়িকার রূপের কাছে হার মেনেছে গয়নার জৌলুস। অদাহ ভাল গাইতে পারেন। তিনি মহারাষ্ট্রের মেয়ে। তাই রামনবমী উপলক্ষে খালি গলায় ছোট্ট করে ভজনও শোনান সবাইকে। আজকাল ডট ইন মুখোমুখি হয়েছিল নায়িকার। তাঁর আগের নাম চামুণ্ডেশরী আইয়ার। সেখান থেকে অদাহ শর্মা হয়ে ওঠার যাত্রা কেমন ছিল? নায়িকার বিনীত জবাব, ‘‘নামটা আমিই বদলেছি। যাতে সবার উচ্চারণ করতে সুবিধে হয়। এবং তখন চামুণ্ডেশ্বরীকে সবাই বলতেন, এই নাম পর্দায় হিট হবে না। কায়দা করে বসে সবার উত্তর দিতে হবে। কখনও সত্যি বলা যাবে না। সততার কোনও দাম নেই। তা হলে আর কাজ পাব না। আমি মানতাম সেগুলো। পরে দেখলাম, আমার সততা, সত্যি কথাই আমার ইউএসপি! এর জন্য আমি আজ অদাহ শর্মা।’’ একটু থেমে ফের রসিকতা, তাঁর এই সততা, সত্যি কথাতেই নাকি অনুরাগীরা ফিদা!

প্রায় এক দশক তিনি অভিনয় করছেন। ২০০৮-এ ‘১৯২০’র পর একের পর এক ছবিতে কাজ করেছেন। জনপ্রিয়তা দিল ‘২০২৩’-র ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এটা কেন? নায়িকার দাবি, ছবি হিট হতে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাগে। সেটা এই ছবিতে তিনি বেশি করে হয়তো পেয়েছেন। তাই তিনি এই ছবিতে জনপ্রিয়। তবে তিনি প্রত্যেক ছবির সঙ্গে ন্যায় করেছেন। কোনও ছবিতে তিনি অদাহ শর্মা হয়ে থাকেননি। চরিত্র হয়ে উঠেছেন। তাই পরিচালকেরা তাঁকে নানা ধারার ছবিতে ডেকেছেন। নানা ধরনের চরিত্র উপহার দিয়েছেন। সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির জনপ্রিয়তার রেশ ধরেই মুক্তি পায় ‘বস্তার’। অদাহ পুলিশ অফিসার। ছবি বাণিজ্যিক ভাবে সফল নয়। হতাশ হয়েছিলেন নায়িকা? এবারেও তিনি অকপট, ‘‘একেবারেই না। আমি ভাগ্যবান, বলিউডের সর্বোচ্চ আয়ের নারীকেন্দ্রিক ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র নায়িকা আমি। আরও ভাগ্যবান, ছবির বাইরে পোশাক, সাজ বা অন্য কোনও কিছু নিয়ে কটাক্ষের শিকার নই। নানা ধরনের কাজ করছি। ফলে, বসে নেই। অনেকে তো এটাও পান না। হতাশ হব কেন?’’ ইদানিং অনেকের ধারণা, অভিনয় নয়, বিতর্ক ছবি হিটের মূল উপাদান। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। এই ছবিতে সফল হওয়ার পরে অদাহ-ও কি এমনটাই ভাবেন? তখনই নায়িকা বলেন, ‘‘এমন অনেক ছবি আছে, যেখানে অভিনয় দুর্দান্ত। কিন্তু ছবি সফল নয়। আবার এমনও ছবি আছে তাকে ঘিরে প্রচুর বিতর্ক। তাতেও সেটি হিট হয়নি। ওই যে বললাম, ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া বেশি জরুরি। তিনি পাশে থাকলে সব সম্ভব।’’ 



অভিনয় দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে অভিনয় ছাড়াও আরও অনেক কিছু জানতে হয়। অদাহ যেমন খুব ভাল জিমন্যাস্ট আর কত্থকশিল্পী। বলিউডে ক্রীড়াবিদদের নিয়ে জীবনীছবি হয়। কোনও দিন এরকম কারও বায়োপিকে তাঁকে দেখা যাবে? কিংবা কোনও নৃত্যশিল্পীর? অদাহকে বেছে নিতে হলে কাকে বাছবেন? নায়িকার মত, ‘‘নৃত্যশিল্পীর জীবন বেছে নেব। এবং আমার পছন্দ অতীতের কোনও অভিনেত্রী। কারণ, তাঁরা খুবই ভাল নাচ জানতেন। এবং তাঁদের জীবন তুলে ধরা জরুরি। আমি জানি, দর্শক এই ধরনের ছবি দেখতে পছন্দ করেন। আর আমিও কত্থকে স্নাতক। আজ পর্যন্ত এই ধরনের কোনও ছবি করিনি।’’ একই সঙ্গে কলকাতার বাংলা ছবিতে অভিনয়ের খুব সাধ তাঁর। ইচ্ছে, সব ভাষায় অভিনয় করবেন। তাই কলকাতার পরিচালকের থেকে ডাকের জন্য় মুখিয়ে অদাহ।

আগামী কাজ? একমুঠো হাসি ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘না বাবা! আগে বলব না। আগে পুরোটা হোক। নইলে আবার বিতর্ক শুরু। ছবি নিষিদ্ধ। সময়ে আপনারা জানতেই পারবেন।’’ একটু দ্বিধা নিয়ে মিষ্টি অনুযোগ, পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ হওয়ায় খুব মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। পরে যখন দেখেন, পাশের রাজ্যে বাংলার লোক ছবি দেখতে যাচ্ছেন, শান্তি পেয়েছিলেন।